নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :: পেকুয়ায় খাল ভরাট করে চলছে মার্কেট নির্মাণ কাজ। প্রবাহমান কহলখালী খাল দখলের মহোৎসব দেখা দিয়েছে। এতে করে উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র কবির আহমদ চৌং বাজারের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থেমে যাওয়ার উপক্রম পরিলক্ষিত করা হচ্ছে। কহল খালের কুল ও পানির স্রোতধারা ভরাট করে সেখানে নির্মিত হচ্ছে দুটি অত্যাধুনিক মার্কেটসহ বহুতল ভবন। ইতিমধ্যে খাল ভরাটের কর্মযজ্ঞ চলছে।
পেকুয়া বাজারের লাগোয়া প্রবাহমান কহল খালী খালটি সদর ইউনিয়নের পানি চলাচলের গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম। ওই খালের বিস্তৃতি সিকদারপাড়া থেকে কবির আহমদ চৌং বাজারের পশ্চিম পাশের্^ ভোলাইয়াঘোনা পর্যন্ত। প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য কহলখালী খালটি চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ইতিমধ্যে সদর ইউনিয়নের কলেজ গেইট চৌমুহনী অংশে খালের বিপুল অংশ জবর দখল করা হয়েছে।
প্রভাবশালী মহল খাল বিলুপ্তি করে সেখানে করা হয়েছে শ্রেনী পরিবর্তন। নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন ও দালান কোটা। এরই ধারাবাহিকতায় পেকুয়ায় কহলখালী খালটি মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে। চৌমুহনী পয়েন্টে কহলখালী খালের বিপুল অংশ ভরাট করা হয়েছে। এক শ্রেনীর দখলবাজচক্র কয়েক বছর আগেই খালে অনুপ্রবেশ করেন। তারা সেখানে মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণকাজ বাস্তবায়নও করে।
পেকুয়া বাজারের দক্ষিণ পাশের্^ ইউনিয়ন পরিষদ কালভার্টের নিকট থেকে পশ্চিম দিকে ওয়াপদার স্লুইচ গেইট পর্যন্ত খালটির নাজুক অবস্থা চরমে। প্রায় ১০ চেইন মত দৈর্ঘ্য অংশে কহল খাল নতুন করে ভরাটের মধ্যে পড়ে গেছে। পূর্ব পশ্চিম দৈর্ঘ্যরে ওই খালের দক্ষিণকুলে দখলের মহোৎসব চলছে। সেখানে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। খাল ঘেষেই নির্মিত প্রতিষ্টান সমূহ তৈরী করছেন মার্কেট নির্মাণকাজ। তারা ইতিমধ্যেই দুটি মার্কেট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করতে মাটি ভরাট করেছেন।
দেখা গেছে মার্কেট নির্মাণের জন্য তারা খালের কুল ভরাট করে ফেলেছে। এমনকি তারা এখন খালটির পানির প্রবাহের কাছে মাটিগুলি নিয়ে এসেছেন। কয়েকজন ভূমিদস্যু চক্র খালের অর্ধেক অংশ ভরাট করে ফেলেছে। খালটি চরম সংকুচিত হয়ে এখন মরাখালে পরিনত হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে, কহলখালের তীরে দুটি মার্কেট নির্মাণকাজ আরম্ভ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ সড়কের পশ্চিম পাশের্^ নির্মিত হচ্ছে ইম্পালস নিউ মার্কেট ও পেকুয়া নিউ মার্কেট নামের দুটি প্রতিষ্টানে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারা খালের তীরে এ মার্কেট দুটি নির্মাণের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত।
দেখা গেছে ইম্পালস নিউ মার্কেট নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন পাইলিং এর কাজ চলছে। তবে ইম্পালস নিউ মার্কেট নির্মাণের জন্য তারা খালের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। মাটি ভরাট করে খালের মধ্যভাগ পর্যন্ত অংশ নিজেরা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করে ফেলেছেন।
পানির স্রোত আটকিয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে খালে। আকবর আহমদ নামক এক ব্যক্তি মার্কেট নির্মাণের জন্য ভূমি দিয়েছেন। নির্মাণকারী প্রতিষ্টান ইম্পালস প্রপার্টিস ও ভূমির মালিকের মধ্যে চুক্তিমতে ওই মার্কেট নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। দেখা গেছে, আকবর আহমদই খালটির জায়গা জবর দখলে ব্যস্ত রয়েছে। খালটি সংকুচিত করে ওই ব্যক্তি নির্মাণকারী প্রতিষ্টানকে দিয়ে খালের গতিপথ রুদ্ধ করেছে।
পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী শাহাদাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মঈন উদ্দিন জানান, নিউ মার্কেট যারা নির্মাণ করছেন তারাই কহল খাল ভরাট করে মাটি ফেলেছেন। আমি ব্যবসা করি পেকুয়া বাজারে। খালের নিকট আমার প্রতিষ্টানও রয়েছে। ভরাট হচ্ছে খালটির দক্ষিণকুল। জায়গার দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এখন খালটি কিছু মানুষের কুদৃষ্টির মধ্যে পড়েছে। এর আগেও খালের পূর্ব প্রান্তে বিশাল অংশ মানুষের জবর দখলে গেছে। এখন সংকুচিত প্রশস্ত হয়ে খালটি অনেকটা মরাখালে পরিনত হয়েছে।
অথচ এ খালের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভোলাখালের সাথে ওই খালের মিশ্রণ। জোয়ার ভাটার কহলখালের সঙ্গে সদর ইউনিয়নের অনেক কিছু নির্ভরশীল। পানি চলাচল হয়ে থাকে এ খাল দিয়ে। এ ছাড়াও বর্জ্য ও পয়:প্রণালী নি:সরিত হয় এ খাল দিয়ে। শুষ্ক মৌসুমে এ খালের পানি থেকে ফসল উৎপাদন হয়। কৃষক শীতকালীন ও মৌসুমী শাক সবজি ফলান এ খালের মিষ্টি পানির উৎস থেকে।
পেকুয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দুটি প্রতিষ্টান নির্মিত হচ্ছে খালের কুল ঘেষে। তারা মার্কেট নির্মাণের জন্য ভরাট করেছে খাল। পেকুয়া বাজারের বণিক সমিতির নেতারা জানান, যে কোন উপায়ে কহলখাল দখল মুক্ত রাখতে হবে। বিদায়ী ইউএনও মারুফুর রশিদ খান কহল খাল খনন কাজ বাস্তবায়ন করছিলেন। তিনি এ খালের অস্তিত্ব উদ্ধার করছিলেন। বর্তমানে নজরদারীর অভাবে খালটি ফের জবর দখলের মধ্যে পড়েছে।
পেকুয়া বাজার বণিক সমিতির সম্পাদক মো: শাহেদ ইকবাল জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। খালটিতে সকলের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। খাল রক্ষার জন্য প্রয়োজনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের বরাবরে অভিযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাছেম বিল্যাহ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পেকুয়া সহকারী কমিশন ভূমি মীকি মারমা জানান, খাল ভরাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাল জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: